Skip to main content

গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন নহে বিদ্যা, নহে ধন হলে প্রয়োজন - ভাব-সম্প্রসারণ

গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন নহে বিদ্যা, নহে ধন হলে প্রয়োজন।

( i )

ভাব-সম্প্রসারণ : 

গ্রন্থগত বিদ্যা এবং পরের হাতের ধন-সম্পদ যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের হাতে না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত তা কোনো কাজে লাগে না। অর্থাৎ বইয়ের বিদ্যা যা আত্মস্থ হয়নি এবং পরের সম্পদ যা নিজের আয়ত্তে আসেনি- তা প্রয়োজনের সময় কোনো কাজে ব্যবহার করা যায় না। মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। তার বিবেক আছে। মানুষ জ্ঞান অর্জন করে মহৎ গুণাবলির অধিকারী হয়। পরিশ্রম ও বুদ্ধি দিয়ে সে অর্থ উপার্জন করে। জ্ঞান ও অর্থ মানুষের মনুষ্যত্বকে পূর্ণতা দেয়। জ্ঞান অর্জন করতে হলে তাকে পড়াশুনা করতে হয়। গ্রন্থ বা বই জ্ঞানের ভান্ডার। এ গ্রন্থ পাঠ করে অন্য মানুষ তার জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করতে পারে। জ্ঞানের ধারক ও বাহক হচ্ছে বই। গ্রন্থে আবদ্ধ মননের সোনালি শস্যের স্বাদ পেতে হলে আমাদেরকে বই পড়তেই হবে। কিন্তু বই হৃদয়ঙ্গম না করে কেবল প্রচুর বই সংগ্রহে রাখলেই তাকে জ্ঞানী বলা যায় না। কারণ ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় জীবনের প্রয়োজন দেখা দিলে গ্রন্থগত সে বিদ্যা কোনো কাজেই আসে না। কেবল মুখস্থ করে পরীক্ষা পাস করলেই প্রকৃত শিক্ষা পেতে পারে না। যদি গ্রন্থের আদর্শকে আত্মস্থ করা না যায়, তাহলে তা জীবনের কোনো উপকারেই আসে না। বিদ্যার পোশাকিরূপে দেহশোভিত করলেই যথার্থ বিদ্বান হওয়া যায় না। যেমন নিজের ধন অন্যের কাছে থাকলে প্রয়োজনের সময় উপকারে আসে না। বিদ্যা ও ধন মানুষের অতি প্রয়োজনীয় জিনিস। তাদের কাজে লাগাতে হলে বিদ্যাকে করতে হয় আত্মস্থ আর ধনকে রাখতে হয় নিজের আয়ত্তে। সে জন্যেই বলা হয়েছে, পুঁথিগত বিদ্যা যেমন মূল্যহীন, তেমনি পর হস্তের ধনও নিরর্থক। বই জ্ঞান অর্জনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম এটা যেমন সত্য, তেমনি এও সত্য বই থেকে আহরিত জ্ঞানকে কাজে লাগাতে ব্যবহারিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হয় এবং ধন-সম্পদ নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের আয়ত্তে আনতে হয়। না হলে তা জীবনে কার্যকারিতার বাইরেই থেকে যায়।

বিকল্প ভাব-সম্প্রসারণ : 

( ii )

মূলভাব : গ্রন্থগত বিদ্যা আত্মস্থ না করে জ্ঞানী ভাবা আর পরের হাতে ধন রেখে সে ধন নিজের বলে জাহির করা অর্থহীন। কারণ সে জ্ঞান বা ধন প্রয়োজনে কোনো কাজে আসে না।

সম্প্রসারিত ভাব : 

মানব জীবনে বিদ্যা ও ধন উভয়েরই প্রয়োজন রয়েছে। বিদ্যা ও ধন সাধনা-লব্ধ ফল। কিন্তু বিদ্যা গ্রন্থাশ্রয়ী এবং ধন পরিশ্রম-লব্ধ, প্রয়োজনের তাগিদে সীমাবদ্ধ। বিদ্যার প্রয়োজন জ্ঞান চক্ষু ফুটানোর জন্য, আর জ্ঞানের বাহন হচ্ছে পুস্তক। এ পুস্তক থেকে শিক্ষার মাধ্যমেই ব্যক্তি হতে পারে আত্মনির্ভরশীল, সংযমী ও আদর্শবান। বিদ্যাকে গ্রন্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে মনে না করে বিদ্যানুশীলনের মাধ্যমে আমাদের আত্মমুক্তির পথ খুঁজতে হবে। বিদ্যা অর্জন করে শুধু বিশ্বজোড়া খ্যাতি লাভ কিংবা পণ্ডিত হিসেবে পরিচিতি লাভের মধ্যে বিদ্যানের কোনো সার্থকতা নেই। বরং অর্জিত বিদ্যার মাধ্যমে জীবনকে সুন্দর ও গতিশীল করার পাশাপাশি সমাজ ও দেশকে উন্নত করার কাজে ব্যবহার করলেই বিদ্যা স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়। তদ্রূপ অর্জিত ধন নিজের কাছে না রেখে অন্যের কাছে রেখে সে ধনের মালিকানা নিজের বলে জাহির করা যায় না। কারণ, নিজের কোনো জরুরি প্রয়োজনের সময় সে ধন নাও পাওয়া যেতে পারে। তাই সার্থক ও সুন্দর জীবনের জন্য বিদ্যাকে বুদ্ধির মাধ্যমে আত্মস্থ করে বাস্তবে প্রয়োগ করা এবং অর্জিত সম্পদ অহেতুক গচ্ছিত না রেখে প্রয়োজনে ব্যবহার করার মধ্য দিয়েই অর্জিত বিদ্যা বা ধন প্রকৃত সার্থকতা লাভ করে।

মন্তব্য : 

জীবনের অতি প্রয়োজনীয় দুটি উপাদান বিদ্যা ও ধন উভয়ই যেন প্রয়োজনে কাজে লাগে সেদিক লক্ষ রাখতে হবে।

Comments

Popular posts from this blog

তরুতলে বসে পান্থ শ্রান্তি করে দূর - সারমর্ম

তরুতলে বসে পান্থ শ্রান্তি করে দূর, ফল আস্বাদনে পায় আনন্দ প্রচুর। বিদায়ের কালে হাতে ডাল ভেঙ্গে লয়, তরু তবু অকাতর, কিছু নাহি কয়। দুর্লভ মানব জন্ম পেয়েছ যখন, তরুর আদর্শ কর জীবনে গ্রহণ। পরার্থে আপন সুখ দিয়ে বিসর্জন, তুমিও হওগাে ধন্য তরুর মতন। সারমর্ম : অপরের কল্যাণে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেই মানব। জীবনের প্রকৃত সার্থকতা। মহৎ হৃদয়ের অধিকারীরা অন্যের জন্য জীবনের সর্বস্ব বিলিয়ে। দিতে কণ্ঠাবােধ করেন না। দর্লভ মানব জন্য তাদের সার্থক হয় পরহিত ব্রতে নিজকে উৎসর্গের মধ্য দিয়ে। যেমনটি গাছ করে থাকে। মানুষেরও উচিত গাছের আদর্শ অনুসরণ করে পরার্থে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া।

নলকূপ স্থাপনের জন্য আবেদন

তারিখ : ১৭/০২/২০১৪ ইং বরাবর চেয়ারম্যান, ৬নং দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদ। হােমনা, কুমিল্লা। বিষয় : নলকূপ স্থাপনের জন্য আবেদন। জনাব, যথাযথ সম্মানপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা আপনার ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের অধিবাসী। আমাদের গ্রামটি একটি জনবহুল ও বর্ধিষ্ণু গ্রাম। এ গ্রামের লােকসংখ্যা প্রায় দুই হাজার। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, এ গ্রামে পানীয় জলের তেমন সুব্যবস্থা নেই। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত গ্রামের একমাত্র নলকূপটি দীর্ঘদিন যাবত পরিত্যাক্ত অবস্থায় আছে। গ্রামে যে দু-চারটি হাজা-মজা পুকুর আছে, সেগুলােও আবর্জনা ও জঞ্জালে পিরপূর্ণ। এমনকি, ফাল্গুন-চেত্র মাসে এগুলোও শুকিয়ে যায়। ফলে গ্রামবাসীদের পানির অভাবে দুঃখের সীমা থাকে না। নিতান্ত বাধ্য হয়ে নদী ও ডােবা থেকে সংগৃহীত দূষিত পানি পান করার ফলে প্রতি বছরই কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় ইত্যাদি মারাত্মক রােগে আক্রান্ত হয়ে এ গ্রামের বহুলােক অকালে মৃত্যুবরণ করে। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন, অনতিবিলম্বে উক্ত গ্রামে অন্তত তিনটি নলকুপ স্থাপন করে জনজীবনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে মর্জি হয়। বিনীত নিবেদক গ্রামবাসীর প...