জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।
ভাব-সম্প্রসারণ :
জ্ঞান-বিজ্ঞানের আসল উদ্দেশ্য মানুষকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গুণে-মানে পরিপূর্ণ করে তোলা। আর তা সম্ভব হলেই একজন মানুষ প্রকৃত মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আর জাতি হিসেবে মানুষ উঠে যায় উন্নতির শিখরে। এর প্রভাবেই নানা ধরনের কুসংস্কার, জড়তা ও হীনতা থেকে মুক্ত হয়ে শক্তিশালী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে বিশ্বের দরবারে। আর এই জ্ঞান যদি সীমাবদ্ধ হয়ে যায় পুঁথি-পুস্তক কিংবা সংকীর্ণ চিন্তা-চেতনায়, তবে বুদ্ধি-বিবেক সেখানে আড়ষ্ট হয়ে পড়ে এবং সামগ্রিক মুক্তি সেখানে হয় সুদূর পরাহত। এ জন্যই মুক্তবুদ্ধির চর্চার মধ্য দিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সীমাবদ্ধ না রেখে যারা উদারভাবে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয় তারাই সমাজের আদর্শ মানুষ হিসেবে পরিপূর্ণ মর্যাদা লাভ করেন। মুক্ত জ্ঞানের চর্চার মাধ্যমেই জাতি পেতে পারে সঠিক পথের সোনালি ভবিষ্যৎ। আজকে যে জাতি যত উন্নত, সে জাতির উন্নতির মূলে রয়েছে অসীম জ্ঞান শিক্ষার তৃষ্ণা। ফলে তারা কূপমণ্ডুক না হয়ে, বুদ্ধির আড়ষ্টতায় জড়িয়ে না গিয়ে মুক্তির সোপানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন স্বমহিমায়। আমরা জানি, জ্ঞানশক্তির বিকাশ ঘটিয়েই কোনো ব্যক্তি জাতীয় উন্নতিতে অংশগ্রহণ করতে পারে। তাই প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজন উদার শিক্ষানীতি, যা বুদ্ধি ও বিবেকের আড়ষ্টতা থেকে রক্ষা করবে মানুষকে এবং জাতিকে এনে দেবে কাঙ্ক্ষিত মুক্তির সোনালি অধ্যায়। জ্ঞানের সাধনা মূলত আড়ষ্টতাহীন সাধনা। সীমাবদ্ধ কিংবা লোক দেখানো জ্ঞান অর্জন না করে প্রকৃত জ্ঞান অর্জনই সকলের কাম্য হওয়া উচিত। এই লক্ষ্যে অগ্রসর হলে দেশের ভেতর আবির্ভাব ঘটবে মনীষী বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী, ডাক্তারসহ নামিদামি গুণী মানুষের। যাঁরা দেশ, জাতি ও বিশ্বকে দেখাতে সক্ষম হবে প্রকৃত মুক্তির পথ। আত্মপরিচয়ে বলীয়ান হয়ে উঠতে সক্ষম হবে সমগ্র মানবজাতি। আসলে প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদা অর্জনের জন্য উদার জ্ঞানচর্চা ও মুক্ত বুদ্ধির সাধনাই একমাত্র পথ। আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে হলে, প্রকৃত মুক্তি পেতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।
Comments
Post a Comment